সুনামগঞ্জ , বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত : মৎস্য উপদেষ্টা তাহিরপুরে মডেল মসজিদ নির্মাণ ১৮ মাসের কাজ হয়নি ৫ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির নির্বাচন ছাতক নৌপথে অবাধে চাঁদাবাজি ছাতকে মারামারিতে যুবক নিহত অধিকার’র উদ্যোগে মানবাধিকার দিবস পালিত বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপিত: সম্মাননা পেলেন শ্রেষ্ঠ জয়িতারা ধর্মপাশায় ৫ জয়িতাকে সংবর্ধনা এমএ মান্নান মেধা বৃত্তি পেয়েছে ফারিহা একাডেমি’র ৬ শিক্ষার্থী প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : তারেক রহমান ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস: দালাল না ধরলে পদে পদে হয়রানি অসহায় বৃদ্ধদের জন্য শান্তিনিবাস নির্মাণে চরম দুর্নীতি বিএনপিকে মাইনাসের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নাই আকাশ দাসের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর দরগাপাশায় যুবদলের কর্মীসভা বিশ্বম্ভরপুরে বিআরডিএস’র হেলথ ক্যাম্পেইন উচ্ছেদের পর ফের দখলে ফুটপাত কমরেড বরুণ রায় জীবনভর মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন ধর্মপাশায় ছুরিকাঘাতে তরুণ খুন
ছাত্রলীগের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছেন প্রকল্প পরিচালক

অসহায় বৃদ্ধদের জন্য শান্তিনিবাস নির্মাণে চরম দুর্নীতি

  • আপলোড সময় : ০৯-১২-২০২৪ ০৬:৩৯:২৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-১২-২০২৪ ০৬:৪৩:৩২ অপরাহ্ন
অসহায় বৃদ্ধদের জন্য শান্তিনিবাস নির্মাণে চরম দুর্নীতি
বিশেষ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জে প্রবীণদের জন্য ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তিনিবাসে (প্রবীণা) নিম্নমানের নির্মাণকাজ করে তড়িঘড়ি করে গছিয়ে দিয়ে গেছে সংশ্লিষ্টরা। ২০২৩ সালের জুন মাসে কাগজে-কলমে ভবনটি জোরপূর্বক গ্রহণ করানোর পরপরই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। বৃষ্টি হলে কক্ষগুলোতে ঢুকে পড়ে পানি। তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারকে বাঁচাতে প্রকল্প পরিচালক ভবনটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে গছিয়ে দিয়ে গেছেন। এর আগে সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে ভবনটি হওয়ায় গোপনে চালানো হয়েছিল নির্মাণ কার্যক্রম। এ বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনসহ সরাসরি একাধিকবার যোগাযোগ ও ফোনে কথা বললেও কোনও তথ্য দিতে চাননি প্রকল্প পরিচালক সাদেকুল হক। অভিযোগআছে গত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি দেশের ৮টি শান্তিনিবাস প্রকল্পের শত কোটি টাকার কাজে পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে কনসালটেন্সি ফার্মের সঙ্গে মিলেমিশে নিম্নমানের কাজ করেছেন। শুধু নির্মাণ কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতিই নয় ভবনের লিফট, ফার্নিচারও দরপত্র অনুযায়ী দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের পরিচালক ঠিকাদারদের সঙ্গে আতাত করে নিম্নমানের কাজে সহযোগিতা করায় এখনই ভবনটি নষ্ট হওয়ার পথে। প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দের এই ভবন নির্মাণে লুকোচুরি ও বড়ো রকমের দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকার অসহায় সিনিয়র সিটিজেনদের কথা চিন্তা করে সারাদেশে ৮টি শান্তিনিবাস (প্রবীণা) নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহেদ আহমদকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সিলেট বিভাগের শান্তিনিবাস নির্মিত হয় সুনামগঞ্জ শিশু পরিবার ক্যাম্পাসে। বরাদ্দপ্রায় ৭ কোটি টাকা। ২৫ শয্যাবিশিষ্ট এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। একটি কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগ দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা ও প্রকল্প পরিচালক নিজেই কাজ করেছেন এমন অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একাধিক লোকজন। সাংবাদিকরা কিভাবে ভবন নির্মাণের তথ্য পেলো এবং ছবি তোললো এ নিয়ে অফিসের লোকদেরও শাসিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। জানা গেছে, ২০২০-২০২২ অর্থ বছরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আরো এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছিল শান্তিনিবাস নির্মাণে। ২০২৩ সনের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও ওই সময় কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে তড়িঘড়ি করে কাজটি বুঝিয়ে দিতে উদ্যোগ নেন প্রকল্প পরিচালক। শিশুপরিবারে এতিম শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আসা একাধিক অভিভাবক জানান, নির্মাণকাজ যখন চলে তখন কোনও তদারকি ছিল না। সংরক্ষিত এলাকার সুবিধা নিয়ে গোপনে যাচ্ছেতাই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ। নিয়মানুযায়ী বালু, সিমেন্ট এবং রড দেওয়া হয়নি। পাইলিংয়ের কাজেও ত্রুটি ছিল। ভবনের ফিনিশিংয়ের সময় ভিটবালু দিয়ে পলেস্তরা দেওয়া হয়েছে। স্যানিটেশন, ডেকোরেশন, টাইলস, দরোজা-জানালা, কালার দরপত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট পণ্য ব্যবহার করা হয়নি। দরপত্র অনুসারে বৈদ্যুতিকপণ্য, দরোজা, জানালা, গ্রিল, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র দেওয়া হয়নি। লিফট স্থাপনেও অনিয়ম হয়েছে। সুনামগঞ্জসহ ৮টি শান্তিনিবাসের লিফট স্থাপনেও ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে। বিদেশি লিফটের বদলে দেশি, চায়না ও ইন্ডিয়ান লিফটের অংশ বিশেষ দিয়ে লিফটের কাজ শেষ করা হয়েছে এমন অভিযোগ আছে। ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল আসবাবপত্রই কার্যাদেশ অনুযায়ী যথাযথভাবে দেওয়া হয়নি। নি¤œমানের পণ্য দিয়ে গোপনে তুলে নেওয়া হয়েছে বরাদ্দের পুরো টাকা। জানা গেছে, শান্তিনিবাসে আরবোরি কালচার ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং উন্নতমানের করার কথা থাকলেও তা খুবই নি¤œমানের করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে বৃষ্টি হলে সারা ভবনে পানি পড়ে। এ সময় প্রতিটি কক্ষে পানি ঢুকে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৮টি শান্তিনিবাস (প্রবীণা) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে উপসচিব শাহেদ আহমদ দায়িত্ব পেয়ে নিজেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিশে যান। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা সারাদেশের এই ৮টি শান্তিনিবাসের কাজ বাস্তবায়ন করেন। প্রকল্প পরিচালক নিয়মিত তদারকি করার কথা থাকলেও কখনো নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকালে সুনামগঞ্জেই আসেননি। বরং ঠিকাদারদের হয়ে নিম্নমানের পণ্য দিয়ে কিভাবে তড়িঘড়ি করে কাজ করা যায় এই তাড়া ছিল তার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কাজের অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তাদেরকে শাসাতেন সাদেকুল। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন এক বছর আগেই তিনি ভবনটি গ্রহণ করেছেন। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের এক পত্রে জানাযায়, প্রকল্পটি তখনো উদ্বোধনের অপেক্ষায়। অবহেলিত বয়োবৃদ্ধাদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করে প্রবীণ-প্রবীণাদের সাথে পারিবারিক সহাবস্থানে শিশুরা বেড়ে ওঠার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার এই উদ্যোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প পরিচালক অবহেলিত বয়োবৃদ্ধদের জন্য নির্মিত এই ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন। কাগজে-কলমে কাজটি শেষ করা হলেও এখনো কোনও প্রবীণা এখানে এসে ওঠেননি বলে জানাগেছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটিমানিও ঠিকাদারের হাতে তোলে দিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন প্রকল্প পরিচালক সাদেকুল। এদিকে গত ১০ জুলাই এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে একটি পত্র ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো তথ্য দেননি। বরং প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বলতেই অপারগতা প্রকাশ করেন। নিউজ না করার জন্য তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়েও হুমকি-ধমকি দেওয়ান। সুনামগঞ্জ সরকারি বালিকা এতিমখানা ক্যাম্পাসে নির্মিত এই ভবনটি কর্তৃপক্ষ হিসেবে এখন তাসলিমা আক্তার লিমা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ভবনটি যখন হস্তান্তর করা হয় তখন আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম। সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুচিত্রা রায় বলেন, এই ভবন নির্মাণের কোনও কাগজপত্র আমাদের কাছে নাই। সবকিছু করেছেন সাদেকুল হক স্যার। প্রকল্প পরিচালক মো. সাদেকুল হক বলেন, কারা কাজ বাস্তবায়ন করেছেন আমার মনে নাই। আমি এই কাজে কোনও দুর্নীতি ও অনিয়ম করিনি। বর্ষার সময় পানি পড়ার যে ত্রুটি ছিল তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়ে সংস্কার করিয়েছি। প্রায় চার মাস আগে লিখিত তথ্যের জন্য এবং ফোনে একাধিকবার তথ্য চাইলেও তথ্য দিতে লুকোচুরি করছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা কাজটি করেছে আমার মনে নাই।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স